মানিকগঞ্জের প্রধান ডাকঘর কার্যালয়ে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। কেউ ঘুষ না দিতে চাইলে তাকে পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। এমনকি এই দুর্নীতি আর অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তার সঙ্গে করা হয় অশোভন আচরণ।
ভুক্তভোগীদের দাবি, অনেকেই মান সম্মানের ভয়ে বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এই ঘুষ দুর্নীতির নেপথ্যে ওই কার্যালয়ের সহকারি পোস্ট মাস্টার হায়দার আলী। পোস্ট মাষ্টার আবদুল জব্বার খানকে ম্যানেজ করেই তিনি এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
হায়দার আলী’র মতো গুটিকয়েক অসাধু কর্মকর্তার কারণে এই কার্যালয়ে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও বিব্রত।
ডাকঘরে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সঞ্চয়ের টাকা জমা রাখতে গ্রাহকদের প্রায়ই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। টাকা জমাদানের রশিদ বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫০ থেকে ২’শ টাকা নেয়া হয়। আবার সঞ্চয়ের টাকা উত্তোলনের সময় সুবিধাভোগী গ্রাহকদের কাছে থেকে উৎকোচ নেয়া হয়।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার পৌলি এলাকার আমজাদ খানের স্ত্রী তাহমিনা খানের অভিযোগ, তিন বছরের জন্য সঞ্চয়ী হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা পোস্ট অফিসে রেখেছি। এখানে টাকা জমা দেয়ার সময়ও উৎকোচ লাগে, টাকা তুলতেও উৎকোচ লাগে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বারাহিরচর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী ইউনুস আলী জানান, তিন বছরের জন্য ছয় লাখ টাকা সঞ্চয় রাখতে ওই কার্যালয়ে যান। সঞ্চয় জমাদানের রশিদ (ফরম) বিনামূল্যে পাওয়ার কথা থাকলেও তার কাছ থেকে নেয়া হয় ৫০ টাকা। এরপর টাকা জমা দিতে গেলে তার কাছে ৭’শ টাকা ঘুষ দাবি করেন এক কর্মকর্তা। তিনি ৫’শ টাকা দিতে রাজিও হন। কিন্তু তার কাছে ৭’শ টাকা না দেয়ায় তার সঞ্চয়ের টাকা জমা করেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি টাকা জমা না দিয়েই বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডাকঘরের এক কর্মচারি জানান, সহকারি পোস্ট মাস্টার হায়দার আলীর ইন্ধনে গ্রাহকদের কাছ থেকে এসব উৎকোচ নেয়া হচ্ছে। আর এই উৎকোচের টাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারি পোস্ট মাস্টার হায়দার আলী বলেন, এসব অভিযোগ সঠিক নয়। উৎকোচ কিংবা ঘুষ লেনদেনের কোনো প্রশ্নই আসে না।
পোস্ট মাষ্টার আবদুল জব্বার খান বলেন, গ্রাহকদের এসব সমস্যার কথা শুনেছেন। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
জেলা ডাকঘর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ডাক বিভাগে পাঁচটি স্কিম চালু আছে। এগুলো হলো পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং ডাকঘর মেয়াদী হিসাব। এর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্রে পাঁচ বছরের জন্য এক লাখ টাকা জমা রাখলে গ্রাহক প্রতি মাসে ৯১২ টাকা লভ্যাংশ (মুনাফা) পাবে। একইভাবে তিন মাস অন্তর সঞ্চয়পত্রে তিন বছরের জন্য গ্রাহক তিন মাস অন্তর অন্তর ২ হাজার ৬২২ টাকা, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে পাঁচ বছরের জন্য তিন মাস অন্তর অন্তর ২ হাজার ৭৯৩ টাকা, বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে পাঁচ বছরের জন্য মেয়াদান্তের ৫৩ হাজার ৫৮০ টাকা এবং ডাকঘর মেয়াদী হিসাবে তিন বছরের জন্য মেয়াদান্তে ৩০ হাজার ৪৫৬ টাকা লভ্যাংশ পাবে।
মানিকগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের সহকারি পোস্ট মাস্টার হায়দার আলী ও তার কতিপয় সহযোগীদের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে গ্রাহকরা ডাকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তারা ডাকঘর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
মানিকগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে গ্রাহকদের ডাকসেবা নিশ্চিত করেত দরকারি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্টরা।
আর/এসএস